ওয়েবডেস্ক- ট্রাম্প–চীন (Donald Trump- China) ট্রেড যুদ্ধ পুনরুজ্জীবিত, IMF–বিশ্বব্যাঙ্কে (World Bank) বৈঠকে উত্তেজনা। চীনা পণ্যে (China Goods) ১০০% শুল্ক (Tariff) আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা বিশ্ব বাণিজ্য International Trade) ও বিনিয়োগ (Investment) ধাক্কা খাবে। সঙ্কট এড়ানো কি সম্ভব? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই আবহে আজ আইএএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের বার্ষিক সভা। ওয়াশিংটনে ১৯০ দেশের প্রতিনিধিরা। ট্রাম্প শুল্ক, চীনা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিরোধ কমানোর চেষ্টা। এই পরিস্থিতিতে খাদের কিনারায় বিশ্ব অর্থনীতি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টে এই ঘোষণায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির (Largest Economy) বাজারের অবস্থা টালমাটাল, অপরদিকে বড় ধাক্কা লেগেছে শেয়ার বাজারে (Share Market) । বর্তমানে বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি প্রক্রিয়াজাত বিরল ধাতু ও চুম্বক তৈরি করে চীন। এই সামগ্রী বৈদ্যুতিক গাড়ি, বিমানের ইঞ্জিন ও সামরিক রাডারের মতো পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এদিকে ট্রাম্পের হঠাৎ করে শুল্ক যুদ্ধের ঘোষণায় মার্কিন শেয়ারবাজারের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ শতাংশের বেশি পড়ে গেছে। এপ্রিলের পর এটি সবচেয়ে বড় পতন। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদের কথা মাথায় রেখে সোনা ও মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলার দুর্বল হয়েছে। এ ছাড়া প্রযুক্তি খাতের শেয়ারের দরও মূল লেনদেনের পরবর্তী লেনদেনে পড়ে যায়।
বিশ্লেষক ক্রেইগ সিঙ্গেলটনের মতে, ট্রাম্পের ঘোষণা হয়তো শুল্কবিরতির অবসান ঘটাতে পারে। ওয়াশিংটন চীনের এই বিরল খনিজ রফতানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি চীন নাকি বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠিয়ে জানাচ্ছে, তারা বিরল ধাতুর উৎপাদনসংক্রান্ত প্রতিটি উপাদানে রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। ট্রাম বলেন,‘বেশ কয়েকটি দেশ আমাকে জানিয়েছে, তারা চীনের এই পদক্ষেপে তারা ক্ষুব্ধ।’
আরও পড়ুন- গোপনে বাড়ছে জ্বালানি তেলের মজুত, যুদ্ধের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন?
উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ফের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করলেন। ট্রাম্প জানান, চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের পাল্টা জবাবে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমদানি শুল্ক বাড়াবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ঘোষণা চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। বর্তমানে শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। ফলে এবার মোট শুল্ক দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশ। সেই সঙ্গে সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই নয়া শুল্ক কার্যকর হবে। বর্তমানে কার্যকর শুল্কবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ দিন আগে এই ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের আরও বক্তব্য, তিন সপ্তাহ পর দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ে সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা এখন অনিশ্চিত। ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, এখন মনে হচ্ছে, এই বৈঠকের আর কোনও মানে নেই।
চীন বিরল ধাতুর রপ্তানিতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পরিপ্রেক্ষিতে চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বের বিরল ধাতুর বাজারের প্রধান সরবরাহকারী চীন। এ বিরল খনিজ ধাতু আজকের প্রযুক্তিগত বিপ্লবের জন্য অপরিহার্য। যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লব এখন পৃথিবীতে ঘটছে, সে বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি হলো চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর। সেই চিপ তৈরিতে এই বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেই সঙ্গে অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রেও এই চিপ প্রয়োজন।
এ ঘটনায় ছয় মাস পর আবারও ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কের বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন—ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যে সাময়িক অর্থনৈতিক সমঝোতা অর্জিত হয়েছিল, তা আদৌ টিকে থাকবে কি না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনে সফটওয়্যার রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে তা দেশটির ক্লাউড কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হবে। ট্রাম্প বিমান ও যন্ত্রাংশের রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণের হুমকি দিয়েছেন। প্রশাসন আরও নতুন লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করছে বলেও জানা গেছে।
বেইজিং বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের নিন্দা জানিয়ে আসছে। তারা মনে করছে, এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
দেখুন ভিডিও-